বাউল কথা
স্বামী পরমানন্দ
প্রিয় আত্মন!
সাত সংখ্যাটি খুবই মহত্ত্বপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। জীব-জগতের প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে ওতপ্রোত-ভাবে জড়িয়ে আছে এই সাত সংখ্যাটি। এখন এই সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
জীবনের সাতটি স্তর (ডাইমেনসন), যথাক্রমে স্থুল দেহেতে তিনটি স্তর বা অবস্থা- উচ্চতা, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, (হাইট, লেন্থ ও ব্রেডথ), তারপর প্রাণ (আয়ুস্কাল) চতুর্থ, মন- পঞ্চম, বুদ্ধি – ষষ্ঠ এবং চিত্ত (ব্যক্তিত্ব বা অন্তঃকরণ) সপ্তম। অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, আয়ু, মন, বুদ্ধি ও চিত্ত – এই সাতটি স্তর। ঠিক যেমন সাতটি রঙ, যথা – বেগুনী, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, লাল ও কমলা। সপ্তাহ – রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি।
সপ্তধাতু – রস, রক্ত, মাংস, বসা, অস্থি, মজ্জা ও মেধা। সূর্যের চারিদিকে সাত সাত চৌদ্দটি গ্রহ – এই পর্যন্ত মানুষ জানতে পেরেছে ১০ টি – বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন। প্লুটো ও ভলকানো। আরও চারটি আছে।
জীবকোষের সাতটি ডি. এন. এ। মাতৃগর্ভে শিশুর বৃদ্ধি সপ্তাহ জুড়ে, তাই সপ্তাহ দিয়ে গণনা হয়। নারীর মাসিকচক্র সপ্তাহ ঘিরে। ঋতু আরম্ভ হতে প্রথম সপ্তাহ ঋতুকাল, ঋতুস্নান হতে দু সপ্তাহ গর্ভসঞ্চার কাল এবং ঋতুপূর্ব এক সপ্তাহ গর্ভনিরোধ কাল। এইরূপ ভাবে সাতটি সমুদ্র বা মহাসাগর, সাতটি উপসাগর, সাতটি স্বর, সপ্তলোক ইত্যাদি।
মানুষের জীবনেও প্রথম সাতটি বছর শৈশব, ২য় সাতটি বছর বাল্য, ৩য় সাতটি বছর কৈশোর, তারপর যৌবনের প্রথম চারটি সাত বছর তারুন্য অর্থাৎ ঊনপঞ্চাশ বছর বয়স এবং যৌবনের শেষ তিনটি সাত বছর প্রৌঢ়ত্ব অর্থাৎ সত্তর বছর বয়স। তারপর বার্ধক্য ১১টি সাত বছর অর্থাৎ প্রথম চারটি সাত বছর বার্ধক্যের আরম্ভ, দ্বিতীয় চারটি সাতবছর বার্ধক্যের মধ্য এবং শেষ তিনটি সাত বছর বার্ধক্যের অন্ত। সুতরাং মানুষের মোট একশত সাতচল্লিশ বছর আয়ুষ্কাল।
প্রাণিক স্তরে মানুষ স্তন্যপায়ী – জরায়ুজ শ্রেণীভুক্ত জীব। জরায়ুজভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীরা যে বয়সে সাধারণত বয়ঃপ্রাপ্তি বা শারীরিক সম্পূর্ণতা পায়, সেই বয়সের সাথে সাত গুন করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে, সেটাই হবে সেই প্রানীর স্বাভাবিক জীবনচক্র বা আয়ুষ্কাল এবং এটি সমস্ত জরায়ুজ স্তন্যপায়ী প্রানীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মানুষ সাধারাণত দৈহিকভাবে পূর্ণ অবয়ত্ব পায় একুশ বছর বয়সে। সুতরাং একুশকে সাত দিয়ে গুন করলে একশো সাতচল্লিশ হয়। সেই হেতু মানুষের যথার্থ বয়স বা আয়ুষ্কাল একশো সাতচল্লিশ বছর। কিন্তু অপঘাত, সংঘাত ইত্যাদি কারণে মানুষ অপরিণত বয়সেই মারা যায়। স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ সঠিক জৈবিকক্রমে খুব কম মানুষ মারা যায়। মানুষ প্রতিনিয়ত মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে অপরিণত বয়েসে।
মানুষের মৃত্যু সাত প্রকারের, যথা অপঘাত, সংঘাত, রোগ, ভোগ, সংঘর্ষ, স্বাভাবিক ও আধ্যাত্মিক। অপঘাত মৃত্যু অর্থাৎ আত্মহত্যা করে মরা। সংঘাত মৃত্যু অর্থাৎ গাড়ি-ঘোড়া ও যন্ত্রপাতি সংঘাতে মৃত্যু এবং বজ্রাঘাত, সর্পাঘাত, হিংস্র পশুদ্বারা আক্রান্ত হয়ে ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়হেতু মানুষের মারা যাওয়া। রোগজনিত মৃত্যু অর্থাৎ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে এবং মহামারী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া। ভোগজনিত মৃত্যু অর্থাৎ লালসা, লোভ, ইত্যাদি রিপু দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অতি ইন্দ্রিয় অসংযমহেতু মারা যাওয়া।
সংঘর্ষজনিত মৃত্যু অর্থাৎ দারিদ্র বা অভাবহেতু অপুষ্টির কারণে এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদির কারণে মারা যাওয়া। স্বাভাবিক মৃত্যু অর্থাৎ বার্ধক্যের অন্তর্দশায় মারা যাওয়া। আধ্যাত্মিক মৃত্যু অর্থাৎ যোগে বা আরাধনায় সমাধিস্থ বা যোগস্থ হয়ে দেহ ত্যাগ করা। এটাই সর্বোৎকৃষ্ট বা শ্রেষ্ঠ। সাধারণত মহাযোগী, মহাজ্ঞানী, মহাভক্ত, মহাপুরুষ ও মহীয়সীরা আধ্যাত্মিক মৃত্যু দ্বারা দেহ ত্যাগ করেন।
মহাযোগী অর্থাৎ পরম ধ্যানী।
মহাভক্ত অর্থাৎ পরম প্রেমী।
মহাজ্ঞানী অর্থাৎ পরম জ্ঞানী।
এঁরা জগতের রহস্য এবং জীবনের মর্মকে জেনেছেন – জীবনের পূর্ণত্ববোধ অর্থাৎ বোধে বোধ করেছেন।
জীবন- যাপনের সাতটি সুত্রঃ
শৈশব= ৭ বছর + বাল্য= ৭ বছর + কৈশোর= ৭ বছর + যৌবন= ২৮+২১ (৪৯) বছর + বার্ধক্য=২৮+২৮+২১ (৭৭) বছর = ১৪৭ বছর মানুষের প্রকৃত আয়ুষ্কাল।
সৌজন্যে, চরৈবেতি, বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন।
No comments:
Post a Comment