Friday, 12 April 2013

সুখী??



বকরূপী  ধর্মরাজ যুধিষ্টির কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন “কঃ সুখীঃ” – সুখী কে? উত্তরে যুধিষ্টির বলেছিলেন – অপ্রবাসী, অঋণী ও দিনান্তে শাকান্ন ভোজী যে, সেই সুখী।
এবার প্রশ্ন হল প্রবাসী কে? যারা ক্ষুন্নি বৃত্তির তাগিদে অথবা অন্য কোন কারনে নিজেদের স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করে বিদেশে বসবাস করতে বাধ্য হয়, তারাই প্রবাসী। আর যারা নিজেদের স্বদেশ ভূমিতে স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত, তারাই অপ্রবাসী। আমরা জন্ম জন্মান্তরের বেদনার দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে সেই দেনার দায় পরিশোধ করার জন্য আমাদের স্বদেশ ভূমি দিব্যলোক থেকে মর্ত্যধামে আসি। তাহলে আর অপ্রবাসী হলাম কৈ? মমতায় জরানো সংসারটিকে আঁকড়ে ধরি ছোট্ট একটুখানি সুখের আশায়; শত অসুখের মধ্যেও চলে আমাদের সুখান্বেষণ। সুখের প্রথম শর্ত তাই পুরন হল না।
সুখের দ্বিতীয় শর্ত অঋণী। একটু ভেবে দেখলে এটা পরিস্কার হবে যে, আমরা কেউ অ-ঋণী নই। কারণ জন্মের সাথে সাথে পাঁচটি ঋণ মাথায় নিয়ে পৃথিবীতে আসি যথা- মাতৃঋণ, পিতৃঋণ, ঋষিঋণ, ও দেবঋণ আবার এর সাথে যোগ হয়ে যায় সামাজিক/ রাষ্ট্রিক ঋণ। এর সাথে স্তরে স্তরে ঘনীভূত জলীয় বাষ্প যেমন ঘন মেঘ তৈরি করে, ঠিক তেমনই এই জন্মে বিভিন্ন এষণা দ্বারা তারিত হয়ে আরও আরও ঋণ জমা হয়ে হয়ে নিরেট স্তরীভূত জগদ্দল শিলা আমদের উপর চেপে বসে, ফলে ঋণে জর্জরিত।
এবার সুখের তৃতীয় শর্ত হল দিনান্তে শাকান্ন-ভোজী। Plain living and high thinking without aspersion or aspiration. এক নির্লিপ্ত যতি জীবন। শ্রী ভগবান বললেন –
“কামক্রোধবিযুক্তানাং যতীনাং যতচেতসাম্ ।
অভিতো ব্রহ্মনির্বানং......” (গীঃ ৫/২৬)
কাম ক্রোধ বিমুক্ত সংযত চিত্ত আত্মদর্শী  যতিগণের ব্রহ্মনির্বাণ নিকটেই।
“শাক”- কথাটি শক্ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে- (শক্+ঘঙ্)। শক্ ধাতুর অর্থ সমর্থ হওয়া to be able আবার “অন্ন” শব্দটি উপনিষদাদি শাস্ত্রে জড়ের প্রতীকরূপে ব্যবহৃত হয়। সেই হেতু আমদের জরদেহটাকে বলা হয় আত্মার অন্নময় কোষ এবং ঐ স্তরে আত্মাকে বলা হয় অন্নময় পুরুষ (Physical Self) তাহলে শাকান্ন বলতে বোঝায় জড়ত্বের নির্মোক মোচন করে চেতনার উত্তরণ ঘটানো – “আমার চেতনা চৈতন্য করে দে মা চৈতন্যময়ী”।
এখন প্রশ্ন আমরা মানুষরা সকলে কি সুখী??

--সৌজন্যে চরৈবেতি, বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন।